আমার চোখে পৃথিবী

ট্যানভেঞ্চার

হেইইই! আমি তানভীর! কিন্তু আপনি আমাকে ট্যান বলতে পারেন

কিন্তু ওটা ভিন্ন এক গল্প

আমার অনেক গল্প বলার ছিলো!

বাংলার বদ্বীপ হতে পৃথিবীর পথে...

পৃথিবীর প্রতিটি উপাদান আমাকে আকৃষ্ট করে। বৃষ্টি, কাদা, শহরের ইট পাথর, মাটিতে পড়ে থাকা সিগারেটের গোড়া, পচা পানির খাল, পথের কোনে শুয়েথাকা বিড়াল, ব্যাস্ত পথের অজানা পথিকের মুখ, গাছের ডালপালা নড়া, মেঘেদের গ্লাইড, সমুদ্রের ঢেউ, পাহাড়ের নেশধরানো সুবাস, পিচঢাকা পথ, পিচ্ছিল খেয়াঘাট, এবং আমার নিজের হাতের তালু। ঢাকা শহরের নারকীয় ট্রাফিকের মাঝে মের কাঠফাটা রোদে দাড়িয়ে ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রশান্তি ভরে হাসতে পারি।

আমি সবাইকে বলি, আমি গরম, ঠান্ডা, কঠিন পরিস্থিতি, হতাশা, এই সবকিছুই দুর্দান্ত ঠান্ডামাথায় সামলাতে পারি, কারন আল্লাহ্‌ আমাকে সারা পৃথিবী দেখার উপযুক্ত করে বানিয়েছেন, তিনি জানতেন, আমার ওসবের প্রয়োজন হবে।

তো, এইতো। আমি সারা পৃথিবী বেড়াবো, আমার সাইকেলে চড়ে। আমার বর্তমান সাইকেলের নাম "বেল্লা", ও একটা কমলা কালো ২৬" হুইলের মাউন্টেইন বাইক। আমরা আসছে শরতে ভারত মহাসাগর দেখতে যাবো। কতইনা গল্পের হিসসা আমরা এই পৃথিবীর বুকে হবো! কখনো তাদের দেখবো, কখনো নিজেরাই তৈরী করবো, আমরা ওগুলো নেশার মত অনুভব করে যাবো। আর লিখবো...আমি অনেক গল্প লিখবো। আপনি সেগুলো পড়তে চাইবেন?

থ্যাংকিউ। আই লাভ ইউ।

"বিশ্বজগত দেখবো আমি
আপন হাতের মুঠোয় পুরে"


বাইকপ্যাকিং


পাহাড়ে হৃদয়ে হতোদ্যমঃ ট্যানের প্রথম পাহাড় দেখা

পাহাড়ে হৃদয়ে হতোদ্যমঃ ট্যানের প্রথম পাহাড় দেখা

আমাদের দেশটা কত বিচিত্র! দিগন্তবিস্তৃত সমতলভূমি থেকে শুরু করে পাহাড়চুড়া,ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট আর সমুদ্রের মালিক সে,তার কাছে সবচেয়ে বেশী আছে নদী,নদী এবং নদী! এমনকি দারুন সুন্দর একটা প্রবালদ্বীপ ও যে আছে আমাদের,যেয়ে শুধু খুজে নিতে হবে। কি দুর্দান্ত একটা ভুখন্ড। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার বিরতি পাওয়ার সাথে সাথেই আমি তাই বেরিয়ে পড়ি মাতৃভূমির অলংকার দর্শনে,তাকে খুজে বের করতে। সেবার আমি জীবনে প্রথমবারের মত পাহাড় দেখেছিলাম। মাতৃভূমির বিচিত্...

বাংলাদেশের তটরেখাঃনোনা বাতাসের দক্ষিনি জনপদের অপরাজিত জীবন

বাংলাদেশের তটরেখাঃনোনা বাতাসের দক্ষিনি জনপদের অপরাজিত জীবন

পৃথিবীটা যদি এক স্বপ্নের দেশ হতো, আমি টেকনাফ রোড ধরে সোজা দক্ষিণে যেতে চাইতাম। নাফ নদী পেরিয়ে সীমাহীন পৃথিবীর বার্মিজ রাজ্যের তটরেখা ধরে বংগোপসাগরের সীমানা পেরিয়ে পৌছুতাম আন্দামান সাগরের তীরে।

লংকাঃ আসামের গহীন অরন্যরাজী পেরিয়ে আচমকা এক শহরতলী!

লংকাঃ আসামের গহীন অরন্যরাজী পেরিয়ে আচমকা এক শহরতলী!

আসামের হোজাই জেলার প্রাণচঞ্চল, অথচ ছোট্ট এক শহর লংকা। জংগলে ঢাকা এই জনপদের উত্তরে ব্রহ্মপুত্রের পলিমাটিগঠিত উর্বর সমতলভুমি, দক্ষিণে কিছুদুর গেলেই পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সারি। গত শরতের এক উত্তপ্ত দিনে প্রথমবারের মত আমি লংকা গিয়েছিলাম।দক্ষিন আসামের ঘন বনভুমি, আর ওখানকার এবড়োথেবড়ো মাটির পথ আমি অবশ্য চাইলেই এড়াতে পারতাম, কিন্তু অবচেতন মনে আমি বেশ করে দেখতেও চাইছিলাম আসামিজ হাতিদের নিবাস। কপলি নদীর দক্ষিন তটরেখা ধরে এগিয়েছে ভীষণ সরু, আমার জীবনে দেখা সব...

ট্যান...


ট্যানকে যেবার প্রথম দেখেছিলাম, ওর সারা গায়ে ধুলো, কাদার ছোপ, ছন্নছাড়া এক ভংগি যেনো তার চেহারায় গিল্টি করে দেয়া হয়েছে, ওর সাইকেলটা ঠেলে নিয়ে আফতাবনগরের একটা সাকো পার হচ্ছে, মুখে লেগে আছে বোকার মত এক টুকরো হাসি, সর্বক্ষণ, চোখদুটোতে কি যেনো একটা অনুভুতি ফুটে আছে। ওই চোখে কেউ ভালো করে তাকালে বুঝতে পারবে, আকাশপাতাল সব ভাবনারা তার মাথায় ঘোরে সারাক্ষণ, যা অনেকের কাছেই বোধগম্য হবেনা, মনে হবে নিতান্ত কিশোরসুলভ বেয়াড়া ভাবনার দল বলে। আর ও সেসব ভাবনা সবাইকে শোনাতেও খুব পছন্দ করতো। ওর সাথে কোনো এক উপলক্ষে কথা হয়েছিলো। ওই একবারই। তার বেশ কিছুদিন পর জানতে পেরেছিলাম, বিশ বছর বয়েসী সেই যুবক তার ওই সাইকেলটা, যার নাম দিয়েছিলো সে 'এসপেরানজা', যার বাংলা অর্থ আশা, ওর আশাকে সাথে নিয়ে কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে, বলে যায়নি সে কাউকেই, কিছু। পরিবারের একমাত্র ছেলে সে, সবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। কি হয়েছিলো ট্যানের?

আজ অবধি আমি ছাড়া আর কেউ জানতে পারেনি তার কথা। ট্যানের সাথে আমার বন্ধুত্বটা অমন এক পর্যায়ে এসে দাড়িয়েছে গত তিন মাসে, সেদিন বিকেলের পর থেকে, যেদিন আমি একটা উড়োচিঠি পেয়েছিলাম- উড়ো ইমেইল আসলে- যে ও আমাকে ভাই বলে ডেকেছে। ট্যান যাকে ভাই সম্বোধন করে, তার সাথে ওর আত্মার সম্পর্ক, কখনোই তা ছিন্ন হবার নয়। আমি সে কথা জানি। ট্যানকে আমি বাধ্য করেছি, ওর নিরন্তর যাত্রার সকল বর্ননা আমাকে লিখে পাঠাতে। ও রাজীও হয়েছে। কিন্তু অদ্ভুত ছেলেটা ঠিক করেছে, কোনো ক্রমের ধার ধারবেনা সে, যখন যা ইচ্ছে করে, লিখে পাঠাবে। আর হ্যা, ঠিক, আমি, তানভীর রেজা অনিক, মিস্টার ট্যানের অকৃত্তিম বন্ধু, ঠিক করেছি ওর যাত্রার ইতিবৃত্ত জোড়াতালি দিয়ে একটা 'উপন্যাস' তৈরী করে ফেলবো। উপন্যাস শব্দের উপর আমার টান। উপন্যাস শব্দের উপর আমার অনেক দুর্বলতা। দেখা ই যাক, কি ঘটতে চলেছে!


ওর গল্প জানুন...